নির্মাণ প্রকল্পের যেকোনো অংশের কংক্রিট ঢালাইয়ের প্রতিটি কাজই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ফলে কাজের গুণগত মান রক্ষা করা এবং নির্মিত কাঠামোর দীর্ঘ স্থায়িত্বতা নিশ্চিত করতে কাজগুলো সঠিকভাবে সম্পন্ন হওয়া প্রয়োজন। মনে রাখা দরকার, কংক্রিট ঢালাইয়ের জন্য প্রদত্ত স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী সব মালামাল ব্যবহার করা এবং নিয়মমাফিক ঢালাইয়ের কাজ শেষ করাই শেষ কথা নয়। ঢালাইয়ের কাজ শেষ করার পরও কিছু নিয়মনীতি মেনে চলা প্রয়োজন। যেমন ঢালাই শেষে নির্দিষ্ট সময়ের পর থেকে নির্ধারিত সময় পর্যন্ত নিয়মিত কিউরিং করা। এ ছাড়া ঢালাই জমাট বাঁধার পর শাটার খোলার ব্যাপারে যথাযথ নিয়ম মেনে চলা দরকার। ফলে কিউরিং করা এবং শাটার খোলা প্রতিটি কাজ সঠিক নিয়মনীতি জেনে করা জরুরি। উল্লেখ্য, একটি কাঠামোর বিভিন্ন মেম্বরের শাটার খোলা এবং কিউরিং করার জন্য ভিন্ন ভিন্ন সময় নির্ধারণ করা থাকে, যা সংশ্লিষ্ট স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারের কাছ থেকে জেনে নেওয়া প্রয়োজন। কোনো কোনো সময় এই বিষয়গুলো ড্রয়িংশিটেও উল্লেখ করা থাকে।
শাটার খোলা
আগেই উল্লেখ করা হয়েছে, কোনো কংক্রিট ঢালাই করার পর শাটার খোলার জন্য একটি স্ট্রাকচারের বিভিন্ন মেম্বরভেদে নির্দিষ্ট সময়সীমা নির্ধারণ করা থাকে, যা মেনে চলা জরুরি। মনে রাখা দরকার, নির্দিষ্ট সময়ের আগে শাটার খোলা হলে ত্রæটিপূর্ণ স্ট্রাকচার তৈরি হবে। স্থায়িত্বতা কমে যাবে নির্মিত ভবনের। আমাদের দেশে, মিস্ত্রিরা কাজের সময় বাঁচাতে কিংবা শাটারিং মালামালের ব্যবহার বাড়াতে নির্দিষ্ট সময়ের আগেই শাটার খোলার জন্য তাড়াহুড়ো করতে থাকে, যা কোনো অবস্থায়ই গ্রহণযোগ্য নয়।
একটি ইমারতের কাঠামো তৈরি করতে ভিত থেকে শুরু করে সর্বশেষ ছাদ ঢালাই করা পর্যন্ত কাজগুলোর আলাদা আলাদা স্তর আছে এবং প্রতিটি স্তরের কাজের জন্য শাটারিং করার কর্মপদ্ধতি আলাদা। পূর্ণাঙ্গ একটি কাঠামোর নির্মাণকাজের স্তরগুলো আলাদাভাবে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়- পাইল, পাইল ক্যাপ, গ্রেড বিম, সিঁড়ি, কলাম, রুফ বিম ও রুফ ¯ø্যাব এগুলোকেই প্রধান অংশ হিসেবে পরিগণিত করা হয় এবং প্রতিটি অংশই আলাদা আলাদা গুরুত্ব বহন করে একটি পূর্ণাঙ্গ কাঠামো তৈরি করে। এ ছাড়া আনুষঙ্গিক কিছু অংশ আছে। যেমন: লিনটেল, সানশেড, ফলস ছাদ, ড্রপ ওয়াল, কার্নিশ, প্যারাপেট, রেইলিং ইত্যাদি।
উপরোল্লিখিত প্রতিটি অংশই ঢালাইয়ের মাধ্যমে তৈরি করা হয় এবং এগুলোর প্রতিটি আলাদা আলাদাভাবে ঢালাই করা হয়ে থাকে। তাই যেকোনো কংক্রিট ঢালাই করার পর তা জমাট বেঁধে প্রয়োজনীয় শক্তি সঞ্চার করা পর্যন্ত নাড়াচাড়া কিংবা এর ওপর হাঁটা-চলা করা উচিত নয়। ফলে, একটি ইমারতের কাঠামো নির্মাণে প্রতিটি মেম্বরের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত শাটার খোলার জন্য আলাদা আলাদা সময়সীমা নির্দেশিত থাকে, যা মেনে চলা অপরিহার্য। নির্দিষ্ট সময়সীমার আগে শাটার খোলা হলে ত্রæটিপূর্ণ এবং দুর্বল একটি কাঠামো নির্মিত হবে। অতএব, কংক্রিট ঢালাই করার কাজে প্রতিটি ক্ষেত্রেই যথাযথ সাবধানতা অবলম্বন করা জরুরি।
একটি ইমারত নির্মাণকাজের প্রতিটি স্তরের ঢালাই শেষে শাটার খোলার বিষয়গুলো আলাদা আলাদাভাবে বিশ্লেষণ করলে প্রথমেই আসে পাইল। পাইল সাধারণত দুই ধরনের হয়ে থাকে;
কাস্ট ইন-সিটু পাইল এবং
প্রি-কাস্ট পাইল
এই দুই ধরনের পাইলের মধ্যে কাস্ট ইন-সিটু পাইলের ক্ষেত্রে কোনো শাটার লাগে না। এই পাইল নির্দিষ্ট স্থানে মাটিতে বোর হোল তৈরি করে একবারে ঢালাই করা হয় বিধায় এখানে শাটার খোলা কিংবা কিউরিং করার মতো কোনো বিষয় থাকে না। কিন্তু প্রি-কাস্ট পাইলের জন্য আলাদা করে শাটার তৈরি করা হয় এবং কংক্রিট জমানোর পর শাটার খোলা হয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে পাইলটি শোয়ানো অবস্থায় ঢালাই করা হয় এবং ঢালাই শেষ করার পর থেকে কমপক্ষে ৪৮ ঘণ্টা পার হওয়ার আগ পর্যন্ত কোনোক্রমেই সাইড শাটার খোলা উচিত নয়। এরপর ন্যূনতম ২৮ দিন কিউরিং করার পর পাইলটি অনত্র সরিয়ে বটম শাটার খোলা হয়। প্রি-কাস্ট পাইল ড্রাইভ করা কিংবা কাস্ট-ইন সিটু পাইল ঢালাই করার পর নির্দিষ্ট একটি মেয়াদে নির্দেশিত লেভেল অনুযায়ী পাইলের মাথা ভেঙে তার ওপর পাইল ক্যাপ বা কলাম বেইজ ঢালাই করা হয়ে থাকে। অতঃপর গ্রেড বিমের তলার লেভেল পর্যন্ত কলামের অংশ বিশেষ ঢালাই করে তার ওপর গ্রেড বিম ঢালাই করে পর্যায়ক্রমিকভাবে বিভিন্ন ফ্লোরের কলাম, রুফ বিম ও রুফ ¯ø্যাব ঢালাইয়ের কাজ সম্পন্ন করা হয়।
এই প্রতিটি ক্ষেত্রেই সাইড ও বটম শাটার খোলার জন্য আলাদা আলাদা সময় নির্ধারণ করা থাকে। সাধারণত পাইল, পাইল ক্যাপ, গ্রেড বিম, সিঁড়ি, কলাম, রুফ বিম, রুফ ¯ø্যাবসহ সব ক্ষেত্রেই সাইড শাটার খোলার জন্য ঢালাই শেষ করার পর থেকে কমপক্ষে ৪৮ ঘণ্টা এবং বিম, ছাদসহ অন্যান্য মেম্বরের বটম (তলা) শাটার খোলার জন্য ঢালাই শেষ করার পর থেকে ন্যূনতম ১৫-২১ দিন পর শাটার খোলা অপরিহার্য। এ ছাড়া নির্মিতব্য কাঠামোর আনুষঙ্গিক অংশগুলো ঢালাই ও শাটার খোলার ব্যাপারে নির্দিষ্ট যেসব নিয়ম আছে, তা মেনে চলা উচিত। প্রতিটি কাজের ধরন ও গুরুত্ব অনুযায়ী সময়ের কিছু হেরফের হতে পারে, যা সাধারণত ডিজাইন ইঞ্জিনিয়ারের নির্দেশনা অনুসারে করা প্রয়োজন। প্রতিটি বিষয়ে সংশ্লিষ্ট স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারের সঙ্গে পরামর্শ করা এবং যথাযথ ক্ষেত্রে সতর্ক হওয়া জরুরি।
প্রকৌশলী মো. হাফিজুর রহমান, পিইঞ্জ
লেখক:
এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর (সার্ভিসেস)
অ্যাডভান্সড ডেভেলপমেন্ট টেকনোলজিস্ লি.
প্রকাশকাল: বন্ধন ১৪৯ তম সংখ্যা, জানুয়ারি ২০২৩