অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার

তাপমাত্রা বৃদ্ধির প্রধান কারণ সবুজায়ন কমে যাওয়া 

রাজধানীর হিটওয়েভ বা দাবদাহের প্রবণতা বেড়েই চলেছে। এতে স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়াসহ বাড়ছে নানা ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি। উন্নত দেশে দাবদাহকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। অস্বাভাবিক তাপমাত্রায় শীতাতপনিয়ন্ত্রিত আশ্রয়শিবির চালু করে গৃহহীনদের আশ্রয়ের পাশাপাশি দেওয়া হয় খাবার ও পানীয়। পাঁচ দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চলতি বছরের এপ্রিলে রেকর্ড করা হয়েছে। নগরায়ণের নামে চলছে বৃক্ষ নিধনের আয়োজন। তীব্র দাবদাহের অভিশাপ থেকে বাঁচতে দেশে ও  শহরে খালি  জায়গায়  বৃক্ষরোপণের উদ্যোগের কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু বাড়ন্ত জনসংখ্যার দেশে কীভাবে হবে সবুজায়ন, তাপমাত্রা কমাতে নেওয়া নানা উদ্যোগই-বা কীভাবে সফল হবে। বন্ধন ম্যাগাজিনকে পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স বিভাগ, স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ- এর ডিন ও চেয়ারম্যান, বায়ুমÐলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সাইফুল হক মিঠু

বন্ধন: সা¤প্রতিক সময়ে দেশব্যাপী তীব্র দাবদাহ অনুভ‚ত হচ্ছে, বিশেষ করে রাজধানীতে। অস্বাভাবিক এমন তাপমাত্রা বৃদ্ধির নেপথ্য কারণসমূহ কী?

ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার: বিশ্বের জলবায়ু প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হচ্ছে এবং বৈশ্বিক তাপমাত্রাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। যার প্রভাব বাংলাদেশের ওপরও রয়েছে। বাংলাদেশে প্রতিনিয়ত যে দাবদাহ দেখা যাচ্ছে এটি দীর্ঘদিনের পরিবেশ ধ্বংসের একটি ফলাফল। দীর্ঘ দিন ধরে তাপমাত্রার এই পর্যায়ক্রমিক বৃদ্ধির ফলে বর্তমান পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এই অস্বাভাবিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণগুলো হলো- সবুজের পরিমাণ কমে যাওয়া, জলাভ‚মি কমে যাওয়া, জনসংখ্যা বৃদ্ধি, শিল্পকারখানা বৃদ্ধি, যানবাহন বৃদ্ধি, ভবনের পরিমাণ বৃদ্ধি, গøাস নির্মিত ভবনের পরিমাণ বৃদ্ধি, অস্বাভাবিক যানজট, অপরিকল্পিত নগরায়ণ, জ্বালানি, ফুটপাতের টাইলস, ভ‚মি ব্যবহারের পরিবর্তন ইত্যাদি। তাপমাত্রা বৃদ্ধির প্রধান কারণ ঢাকার সবুজায়ন কমে যাওয়া। গাছপালা কার্বন ডাই-অক্সাইড ও তাপ শোষণ করে অক্সিজেন সরবরাহ করে, ফলে বাতাসে অক্সিজেন ছড়িয়ে আশপাশের এলাকা শীতল রাখে। কিন্তু এখন শহরের সৌন্দর্যবর্ধনের নামে রাস্তার বিভাজনের বড় বড় গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে। ফলে বায়ুমÐলে অক্সিজেন ও জলীয়বাষ্প কমে গিয়ে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং একই কারণে বৃষ্টিপাতও কমে যাচ্ছে। এ ছাড়া জলাধার কমে যাওয়াও তাপমাত্রা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। গবেষণা থেকে দেখা যায়, ঢাকা শহরের জলাধার বা পুকুরের পরিমাণ আশঙ্কাজনক হারে কমছে। জলাধার মাটির পরিবর্তে বালু দিয়ে ভরাট করা হচ্ছে। এটিও তাপমাত্রা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। যানবাহনও তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে সহায়ক। রাজধানীতে কয়েক লাখ গাড়ি চলাচল করে, যার এক-তৃতীয়াংশই ফিটনেসবিহীন। এগুলোর ইঞ্জিন প্রচÐ পরিমাণে উত্তপ্ত হয় এবং এই তাপমাত্রা বাতাসের সাহায্যে ছড়িয়ে শহরের পরিবেশকে উত্তপ্ত করে। সর্বোপরি বর্তমান নগরায়ণ, শিল্পায়ন ও যোগাযোগব্যবস্থায় অপরিকল্পিত উন্নয়ন কার্যক্রমই তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী।

বন্ধন:‘হিট আইল্যান্ড ইফেক্ট’ নগরের তাপমাত্রার বৃদ্ধির জন্য দায়ী। বিষয়টি বুঝিয়ে বলবেন।

ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার: ঢাকার পিচঢালা রাস্তা দিনের বেলা উত্তপ্ত হয় এবং রাতের প্রথমভাগ পর্যন্ত তাপ ধারণ করে থাকে। এরপর যখন রাস্তাগুলো রাতের বেলায় তাপমাত্রা নির্গমন করে, তখন তা নগরের তাপ বৃদ্ধিতে ভ‚মিকা রাখে। আবার, নতুন করে তৈরি বহুতল ভবনগুলোতে অতিরিক্ত গøাস ও এসির ব্যবহার ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে গøাসে ধারণ করা তাপ ও এসি থেকে নিঃসৃত তাপ বাতাসে ছড়িয়ে শহরের তাপমাত্রাকে আরও বাড়িয়ে দেয়। এ ছাড়া নগরের একটি বিশাল অংশের মানুষ রান্নার কাজে কাঠ পোড়ায়। এর বাইরে নগরীতে প্রায় কয়েক লাখ পরিবার রয়েছে, যাদের চুলায় গড়ে প্রতিদিন কমপক্ষে তিন ঘণ্টা করে রান্নার কাজ চলে। অন্যদিকে বায়ুতে অবস্থিত ধূলিকণা এবং দূষিত গ্যাসের তাপ শোষণ করার ক্ষমতা থাকার কারণে বর্তমানে অত্যধিক দূষিত বায়ুতে অবস্থিত ধূলিকণা এবং গ্যাসীয় পদার্থগুলো সূর্যের তাপমাত্রাকে শোষণ করে তাপপ্রবাহ সৃষ্টিতে ভ‚মিকা রাখছে। পাশাপাশি সালফার ডাই-অক্সাইড, নাইট্রোজেন অক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইড, কার্বন ডাই-অক্সাইড প্রভৃতি তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে সহায়ক ভ‚মিকা রাখে। এভাবে ‘হিট আইল্যান্ড ইফেক্ট’ তাপকে বায়ুমÐলে আবদ্ধ করে রেখে নগরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি করছে।

বন্ধন: নগরের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের ফলে প্রচুর বৃক্ষ নিধন চলছে, তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে নগরের বৃক্ষহীনতা কী ধরনের প্রভাব রাখছে?

ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার: স¤প্রতি শহরের সৌন্দর্যবর্ধনের নামে রাস্তার বিভাজনের গাছগুলো কেটে ফেলা হচ্ছে। এটিও তাপমাত্রা বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান কারণ। একসময় আমাদের দেশে ২৫ শতাংশের বেশি সবুজায়ন থাকলেও এখন আর তা নেই। গাছপালা যেহেতু কার্বন-ডাই-অক্সাইড ও তাপ শোষণ করে অক্সিজেন সরবরাহ করে। ফলে বাতাসে অক্সিজেন ছড়িয়ে আশপাশের এলাকা শীতল রাখে। বন উজাড় করায় গাছ কমে গিয়ে এখন অক্সিজেন, জলীয়বাষ্প কমে গিয়ে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্য দিকে একই কারণে বৃষ্টিপাতও কমে গেছে।

বন্ধন: গাছ না কেটেও কি উন্নয়ন সম্ভব নয়? বিকল্প কী হতে পারে বলে আপনি মনে করেন?

ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার: গাছ না কেটেও উন্নয়ন সম্ভব। কোনো উন্নয়ন প্রকল্প ডিজাইন করার আগে গাছের কথা বিবেচনা করতে হবে। গাছকে প্রকল্পের মাঝে রেখেই ডিজাইন করা সম্ভব। প্রকল্প এলাকায় গাছ পড়ে গেলে গাছটিকে স্থানান্তরের ব্যবস্থা করতে হবে, যেমনটি উন্নত দেশগুলোতে করা হয়। যদি একান্তই গাছ স্থানান্তর সম্ভব না হয়, তাহলে প্রতিটি গাছের বায়োমাস ও ইকোলজিক্যাল ভ্যালু মূল্যায়ন করে নতুন করে বৃক্ষায়ন করতে হবে। 

বন্ধন: কীভাবে নগরের তাপমাত্রা সহনীয় রাখা যায়?

ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার: নগরের এই ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রাকে নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য সর্বপ্রথম যে পদক্ষেপ নিতে হবে তা হলো শহরের প্রতিটি ফাঁকা স্থানে গাছ লাগাতে হবে। রাস্তার বিভাজনে শোভাবর্ধনকারী গাছ ছাড়াও ভ‚মির ধরনের ভিত্তিতে বিভিন্ন রকম উপকারী বৃক্ষ যেমন- বিভিন্ন ফলের গাছ, ঔষধি গাছ, কাষ্ঠল গাছও রোপণ করতে হবে। ছাদবাগান বৃদ্ধি করতে হবে। জলাভ‚মির পরিমাণও বাড়াতে হবে। দখলকৃত জলাভ‚মি উদ্ধার করতে হবে। জলাভ‚মি ভরাট করে কোনো স্থাপনা নির্মাণ করা যাবে না। প্রয়োজনে আইন প্রয়োগের মাধ্যমে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বন্ধ করতে হবে এবং এর পরিবর্তে নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি করতে হবে। অবকাঠামো নির্মাণের সময়ও সচেতন হতে হবে এবং একটি নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে ভবন নির্মাণ করতে হবে। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে এবং শহরাঞ্চল থেকে মানুষের আধিক্যতা কমাতে হবে। অবকাঠামো নির্মাণের সময় সচেতন হতে হবে এবং একটি নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে ভবন নির্মাণ করতে হবে। সর্বোপরি সবাইকে এই তাপ প্রবাহ কমানোর লক্ষ্যে একযোগে কাজ করে যেতে হবে।

বন্ধন: সবুজে আচ্ছাদিত শহরে হিট ওয়েভ বা দাবদাহ প্রতিরোধে কতটা সক্ষম। সবুজ নগরী গড়তে আমাদের বাধা আসলে কোথায়?

ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার: গাছপালার পরিমাণ বেশি থাকলে সালোকসংশ্লেষণের কারণে সূর্যের তাপমাত্রার একটি অংশ ব্যবহৃত হয়। অপর দিকে, গাছপালা কার্বন ডাই-অক্সাইড ও তাপ শোষণ করে অক্সিজেন সরবরাহ করে পরিবেশকে শীতল রাখে। ঢাকা শহরের ৩৬টি স্থান নিয়ে বায়ুমÐলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস)-এর পরিচালিত গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব এলাকায় সবুজের উপস্থিতি রয়েছে সেসব এলাকায় তাপমাত্রা তুলনামূলক কম। এর মধ্যে ৯টি স্থানে তাপমাত্রা বেশি ছিল। কারণ এগুলোতে গাছপালা কম ছিল। আর বাকি ৯টি স্থানে বৃক্ষ বেশি থাকার কারণে তাপমাত্রাও কম ছিল। আর অন্য ১৮টিতে মধ্যমানের তাপমাত্রা ছিল। তবে এর মধ্যে সবচেয়ে কম তাপমাত্রা ছিল বোটানিক্যাল গার্ডেন ও জাতীয় চিড়িয়াখানায়। দ্বিতীয় কম তাপমাত্রার অন্য এলাকাগুলো ছিল, রমনা পার্ক, ধানমন্ডি লেকপাড়, ক্যান্টনমেন্টসহ কিছু এলাকা। অন্য দিকে সবচেয়ে বেশি তাপমাত্রা ছিল তেজগাঁও, মতিঝিল, মিরপুর, যাত্রাবাড়ীসহ কিছু বাণিজ্যিক এলাকা। এগুলোতে ৩ থেকে সাড়ে ৩ ডিগ্রি তাপমাত্রার তারতম্য ছিল। এতেই প্রমাণিত হয়, বৃক্ষ তাপমাত্রা কম কিংবা বৃদ্ধির অন্যতম উৎস।

সবুজ নগরী গড়তে আমাদের প্রথম বাধা হলো অপরিকল্পিত নগরায়ণ, যার কারণে ঢাকা শহরে জায়গার সংকট দেখা দিচ্ছে। দ্বিতীয়ত, শহরের মানুষের সচেতনতার অভাব। তৃতীয়ত, নগরের দায়িতপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষ ও জনসাধারণের কাজের সমন্বয়ের অভাব। এবং চতুর্থত, কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা।

বন্ধন: বৈশ্বিক উষ্ণায়ন তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্য অনেকাংশে দায়ী। উন্নত দেশের নগরগুলোতে তাপমাত্রা সহনীয় রাখতে কী ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করে থাকে?

ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার: বৈশ্বিক উষ্ণায়ন তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্য অনেকাংশে দায়ী। উন্নত দেশের নগরগুলোতে তাপমাত্রা সহনীয় রাখতে নানা পদক্ষেপ ও প্রস্তাবনা গ্রহণ করে থাকে। ইউরোপীয় দেশভুক্ত নগরগুলোতে তাপমাত্রা সহনীয় রাখতে সাধারণত যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয় সেগুলো হলো, টেকসই নগর পরিকল্পনা বাস্তবায়ন, অধিক পরিমাণে জলাভ‚মি এবং প্রতিফলিত পৃষ্ঠ যুক্তকরণের মাধ্যমে শহরের স্থাপত্য পরিবর্তন করা, অধিক পরিমাণে বৃক্ষরোপণ, গ্রীষ্মের জন্য অস্থায়ী অনাবাসিক স্থান তৈরি করা, প্লাস্টিক দূষণ মোকাবিলা এবং শূন্য বর্জ্য অনুসরণ করা, পরিবহনব্যবস্থাকে টেকসই করা, কার্বন ডাই-অক্সাইডকে ব্যয়বহুল করে তোলা, রাস্তা ও ছাদকে সবুজ করে গড়ে তোলা ইত্যাদি। 

বন্ধন: ঢাকার মতো জনবহুল নগরের কোন কোন পরিসরে বৃক্ষরোপণ তথা আরবান ওয়াসিস গড়ে তোলা সম্ভব? বৃক্ষরোপণের পর এসবের রক্ষণাবেক্ষণের প্রক্রিয়া কীভাবে হবে?

ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার: ঢাকার মতো জনবহুল নগরের আবাসিক এলাকাগুলোতে এবং বড় বড় ভবনগুলোর দেয়ালে বৃক্ষরোপণ তথা আরবান ওয়াসিস গড়ে তোলা সম্ভব। ধানমÐি, লালমাটিয়া, মহাখালী ডিওএইচএস এবং উত্তরার আবাসিক ভবনগুলোতে ছাদবাগান করার মাধ্যমে ঢাকায় সবুজের পরিমাণ বৃদ্ধি করা যায়। ভবন ডিজাইন করার সময় আরবান ওয়াসিসের কথা মাথায় রেখে ডিজাইন করতে হবে। এলোমেলো ও অপরিকল্পিত ছাদবাগান ভবনের ক্ষতি করতে পারে। ছাদবাগানের ফলে ছাদ স্যাঁতসেঁতে হয়ে যেতে পারে। এ ছাড়া অপরিষ্কার বাগানে মশা ও পোকামাকড়ের উপদ্রব বৃদ্ধি পেতে পারে। গাছ আমাদের পরম বন্ধু গাছ একদিকে যেমন পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে অপর দিকে আমাদের খাদ্যের জোগান দেওয়াসহ আমাদের বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় মহামূল্যবান অক্সিজেনও সরবরাহ করে থাকে। তাই আমাদেরই আমাদের বাগানের যতœ নিতে হবে, আমাদের পরম বন্ধুর যতœ নিতে হবে। 

বন্ধন: স¤প্রতি ঢাকায় তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ‘চিফ হিট অফিসার’ নিয়োগ দেয়। নগরের তাপমাত্রা সহনীয় রাখতে এই উদ্যোগ কতটা ফলপ্রসূ হবে বলে আপনি মনে করেন?

ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার: এই পদক্ষেপটি অত্যন্ত প্রশংসনীয়। চিফ হিট অফিসার নিয়োগের ফলে সারা বছরের সমগ্র দেশের তাপমাত্রার রেকর্ড পাওয়া যাবে বলে আশা করা যায়। তিনি তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য উদ্যোগ নেবেন এবং এই লক্ষ্যে কাজ করবেন। তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে তিনি বিভিন্ন জনসচেতনতামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেন যেমন, বিভিন্ন সেমিনার ও বৈঠকের আয়োজন করতে পারেন, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় সচেতনতামূলক বিজ্ঞাপন, তথ্যচিত্র ইত্যাদি প্রচারের ব্যবস্থা করতে পারেন। তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণ ও নিয়ন্ত্রণে করণীয় পর্যালোচনা করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে একত্র হয়ে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারেন। তাই আমি মনে করি, চিফ হিট অফিসার নিয়োগ একটি ফলপ্রসূ কার্যক্রম এবং প্রতি জেলাতেই হিট অফিসার নিয়োগ করা জরুরি।

বন্ধন: ঢাকা সড়ক ফুটপাত ও সড়কদ্বীপে সাদা রঙের পেইন্টিং করার মাধ্যমে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন। এই পদ্ধতি কতটা কার্যকর হবে?

ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার: বর্তমান সময়ে এটি তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত। ঢাকা শহরের সব রাস্তাই পিচঢালা রাস্তা, যা কালো রঙের। কালো রং তাপমাত্রা শোষণ করে অপর দিকে সাদা রং তাপমাত্রা প্রতিফলিত করে। সড়ক ফুটপাত ও সড়কদ্বীপে সাদা রং করলে এটি তাপমাত্রাকে প্রতিফলিত করবে এবং নগরের তাপমাত্রা কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণে থাকবে। এ ছাড়া বিল্ডিংয়ের বাইরের দেয়ালে এবং ছাদেও সাদা রং করে দেওয়া যেতে পারে।

বন্ধন: তাপমাত্রা সহনীয় রাখার পাশাপাশি নগরের বায়ুদূষণ রোধে করণীয় কী?

ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার: তাপপ্রবাহের মতো বায়ুদূষণও বিশ্বে বড় সমস্যা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, পৃথিবীর প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ বায়ুদূষণের শিকার হচ্ছে। মাত্র ১০ শতাংশের মতো মানুষ বিশুদ্ধ বায়ু পাচ্ছে। দূষণ রোধে আমাদের কার্যকরী ভ‚মিকা রাখতে হবে। সবার আগে দূষণের উৎসগুলো চিহ্নিত করে তা কমিয়ে আনতে হবে। অধিক পরিমাণে বৃক্ষ রোপণ করতে হবে। ঢাকার আশপাশের ইটের ভাটা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। আগুনে পোড়ানো লাল ইটের বিকল্প সিমেন্ট বালুর বøকের ব্যবহার বাড়াতে হবে। ইটের ভাটাগুলোতে উন্নত ও দূষণমুক্ত প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে। মেয়াদোত্তীর্ণ গাড়ি চালানো বন্ধ করতে হবে। সপ্তাহের ভিন্ন দিনে জোড়-বিজোড় পদ্ধতিতে গাড়ি চলার ব্যবস্থা করতে হবে। ফিটনেসবিহীন যানবাহন ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। সমন্বয়হীনভাবে রাস্তার খোঁড়াখুঁড়ি বন্ধ করতে হবে। সেবাদানকারী সংস্থার সংস্কারকাজে সমন্বয় এনে স্বল্প সময়ে সংস্কার শেষ করতে হবে। নির্মাণসামগ্রী উন্মুক্তভাবে ফেলে রাখা যাবে না। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা উন্নত করতে হবে, যাতে করে যেখানে সেখানে নগর বর্জ্য বা কৃষিবর্জ্য উন্মুক্তভাবে পোড়ানো না হয় সেদিকে নজর রাখতে হবে। অন্যদিকে প্রচলিত আইনকে যথাযথভাবে প্রয়োগ করতে হবে। প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় শিক্ষামূলক প্রচারণা চালাতে হবে। একই সঙ্গে প্রশাসনিক ব্যবস্থার সফল প্রয়োগ একান্তভাবে প্রয়োজন। জনগণকে বায়ুদূষণের সামগ্রিক বিষয়ে তথ্যপ্রদান, শিক্ষিতকরণ ও উদ্বুদ্ধকরণ অত্যন্ত জরুরি। বায়ুদূষণের স্বাস্থ্যগত ও পরিবেশগত প্রভাব ও এর সমাধান নিয়ে ব্যাপকভাবে গবেষণা করতে হবে।

বন্ধন: ধন্যবাদ আপনাকে।

ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার: আপনাকেও ধন্যবাদ।

প্রকাশকা:ল বন্ধন ১৫৪ তম সংখ্যা, জুন ২০২৩

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top