ছেলেবেলায় প্রতিবেশীর বাড়ির কলবেলের সুইচ চেপে দৌড়ে পালানোর মধুর স্মৃৃতি কার না রয়েছে! এমন স্মৃতিচারণায় আপনি যতটা না আন্দোলিত হন, ঠিক ততটাই বিরক্ত হন আলসে দুপুরে যখন প্রতিবেশীর দস্যি ছেলেপুলেরা আপনার বাড়ির কলবেল বাজিয়ে হয় লাপাত্তা। এমন ঘটনার সঙ্গে শহুরে নাগরিকেরা সবাই কমবেশি পরিচিত। তবে কলবেল যে শুধু বিরক্তিকর তা কিন্তু নয়। হয়তো সারা দিন আপনি অপেক্ষা করে থাকেন কখন সংসারের প্রিয় মানুষগুলো বাসায় ফিরবে, বেজে উঠবে কলবেলের মিষ্টি আওয়াজ। আসলে শহুরে জীবনে বাড়িতে কারও উপস্থিতি বোঝা যায় কলবেলের শব্দ শুনেই। তাই দৈনন্দিন জীবনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ এই কলবেল।
বৈদ্যুতিক পাখা বা বাতির মতো কলবেলও প্রাত্যহিক জীবনের অতি প্রয়োজনীর বৈদ্যুতিক ডিভাইস। বিদ্যুৎ-চালিত মেকানিক্যাল এ যন্ত্রটিতে একধরনের ইলেকট্রোম্যাগনেট যুক্ত করা থাকে। সেখানে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হলে তা থেকে কম্পনের সৃষ্টি হয়। আর সেই কম্পন থেকেই উৎপন্ন হয় শব্দের। ডিভাইসটিকে ডোরবেল বা ইলেকট্রিক বেলও বলে। বাসাবাড়ি ছাড়াও অফিস, রেলক্রসিং, অগ্নিসংকেত, স্কুল, কারখানাসহ বিভিন্ন স্থানে ব্যবহৃত হয় যন্ত্রটি। বাসা বা অফিসে ব্যবহৃত কলবেলের সুইস থাকে দরজার বাইরে এবং ডিভাইসটি থাকে ভেতরে। ঘণ্টা খচিত প্রতীকী চিহ্ন থেকে আগন্তুক সহজেই বুঝে নেয় কলবেলের জন্য কোন সুইচে চাপ দিতে হবে।

আগে কলবেলের ধরন ও আওয়াজ ছিল প্রায় অভিন্ন। কিন্তু আধুনিকতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে পরিবর্তন এসেছে এ যন্ত্রটিতেও। ক্রেতা চাহিদা ও রুচির বিষয় মাথায় রেখে কলবেল প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বিভিন্ন মূল্যের রকমারি সুর ও ধ্বনিসংবলিত কলবেল তৈরি ও বাজারজাত করছে। এসবের মধ্যে ডিং-ডং, পাখির ডাক, মিউজিক, গান, ছন্দ, ভৌতিক আওয়াজ রয়েছে ক্রেতা-চাহিদার শীর্ষে। অনেক আবার পরিবারের শিশুর পছন্দের ওপর ভিত্তি করে কলবেলটি বেছে নেন জনপ্রিয় কোনো ছড়া, দেশাত্মবোধক গান বা ছড়াগানের অংশবিশেষ অথবা অনুরূপ যন্ত্রসংগীত। ধর্মীয় মানসিকতাসম্পন্ন ক্রেতার কথা মাথায় রেখে আজান বা বিশেষ কোনো সূরাসংবলিত কলবেলও বাজারে নিয়ে এসেছে কলবেল প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ। বর্তমানে বাসাবাড়ি ছাড়াও বিভিন্ন করপোরেট অফিসে কলবেলের ব্যবহার বেড়েছে। সেক্ষেত্রে ওয়ারলেস বা তারবিহীন কলবেল ব্যবহারের প্রাধান্য দেখা যায়।
এ কথা সত্য কলবেলের ধ্বনিত সুর বা ছন্দটি শুধু কারও আগমন বার্তারই জানান দেয় না, তার সঙ্গে প্রকাশ করে গৃহকর্তার ব্যক্তিত্ব আর রুচির নান্দনিকতাকেও। তাই শুনতে শ্রুতিমধুর নয় এবং অধিক সময় নিয়ে বাজে এমন কলবেল কেনা ও ব্যবহার থেকে বিরত থাকাই উত্তম। এ ছাড়া তীব্র শব্দের কলবেল অনেকে ব্যবহার করেন, যা শব্দদূষণ ঘটায় এবং স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর। তাই উচ্চ বা প্রখর শব্দের কলবেলের পরিবর্তে মৃদু বা মাঝারি আওয়াজের ডিভাইস ব্যবহার করাই উত্তম। প্রত্যাশিত ব্যক্তির আগমন বার্তা বেজে উঠুক শ্রুতিমধুর স্বাগত সুরে এমন প্রত্যাশা নিশ্চয় আপনারও।
দরদাম
বাজারে বিভিন্ন ধরন ও দামের কলবেল পাওয়া যায়। ব্র্যান্ড, মান ও আওয়াজভেদে কলবেলের দাম ভিন্ন হয়ে থাকে। এখন বাজারে আমদানিকৃত চায়না ও ভারতীয় কলবেলের পাশাপাশি দেশে প্রস্তুতকৃত কলবেল পাওয়া যাচ্ছে। বর্তমানে কলবেলের সর্বনিম্ন মূল্য ৮০ টাকা। তবে মাঝারি মানের কলবেলের মূল্য ১৫০ থেকে ৪০০ টাকার মধ্যে। এ ছাড়া ওয়ারলেস কলবেল পাওয়া যাবে ৪০০ থেকে ৮০০ টাকার মধ্যে।

প্রাপ্তিস্থান
সারা দেশের বিভিন্ন বৈদ্যুতিক সামগ্রী বিক্রির দোকানগুলোতে পাওয়া যায় কলবেল। রাজধানীর নবাবপুর, স্টেডিয়াম মার্কেট, পল্টন, কাকরাইল, হাতিরপুল, বনানী, মিরপুরসহ প্রায় সবখানেই মিলবে আপনার প্রত্যাশিত কলবেল।
শ্রাবন্তী সোমা
প্রকাশকাল: বন্ধন ৭৪ তম সংখ্যা, জুন ২০১৬