ঘর, অফিস, কিংবা রেস্টুরেন্ট সাজাতে আমরা কত কিছুই না করছি। বাইরে থেকে দেখেই বোঝা যায় ঘরের ভেতরের সৌন্দর্যটা কেমন। সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বদলেছে মানুষের মনন, রুচি ও পছন্দ। সবাই প্রতিনিয়তই চাইছে নতুন কিছু। চাহিদায়ও রয়েছে বৈচিত্র্য ও নতুনত্বের ছোঁয়া। অফিস, বাসা কিংবা ফ্যাশন হাউস- সর্বত্রই লেগেছে সৌন্দর্যের আভিজাত্য। রূপ বদলের পরিপ্রেক্ষিতে এখন কাঠের দরজা, জানালার পরিবর্তে ব্যবহৃত হচ্ছে হাজারো রঙের বর্ণিল সব শৈল্পিক গ্লাস, যা পাল্টে দিচ্ছে সনাতন ঘরের রূপ। ঘরে দরজা, জানালা কিংবা দরজা ঘেরার জন্য যে জায়গা রয়েছে, সেখানেও এখন ব্যবহার করা হচ্ছে গ্লাস ও গ্লাসপেপার। অনেক সময় ভালো কাঠ খুঁজে পাওয়া যায় না। তা ছাড়া কাঠে খুব সহজে ঘুণপোকা ধরায় নষ্ট হয়ে যায়। আবার কাঠে নান্দনিক নকশা করতে ভালো কারিগরও খুঁজে পাওয়া যায় না। গেলেও এ জন্য দরকার অনেক সময়ের। আবার ঘরে কাঠের ব্যবহার কতটুকু সুন্দর দেখাবে তা নিয়েও রয়েছে নানা সংশয়। এ ভাবনা থেকেই চাহিদা বেড়েছে বৈচিত্র্যময় ডিজাইন ও রঙের খোদাই করা সব গ্লাস ও গ্লাসপেপারের।
গ্লাসপেপার এবং খোদাই করা সব গ্লাস আকর্ষণীয় ডিজাইনের হওয়ায় ঘরে সৌন্দর্যবর্ধনে এর জুড়ি মেলা ভার। রাশা ফ্যাশন হাউসের স্বত্বাধিকারী মঞ্জুরুল আলম বলেন, আমার ফ্যাশন হাউসে শুরুতে সাদামাটা গ্লাস ব্যবহার করেছিলাম। কিন্তু আমি চাইছিলাম ফ্যাশন হাউসটাকে একটু অন্য রকমভাবে সাজাতে। ফ্যাশন হাউসের সর্বত্রই গ্লাসপেপার লাগানোর কথা ভাবি। এরপর কারিগর দিয়ে সুন্দর এবং মনকাড়া ডিজাইনের গ্লাসপেপার লাগাই। এতেই আমার ফ্যাশন হাউসের রূপ বদলে এক অসাধারণ অবয়ব পায়। ফ্যাশন হাউস হয়ে ওঠে আরও বেশি আকর্ষণীয় ও দৃষ্টিনন্দন।

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদলেছে মানুষের চাহিদা। রুচিতে এসেছে পরিবর্তন। সবকিছুতে এখন নতুনত্বের ছোঁয়া। বিলাসবহুল বাড়ি, অফিস, রেস্টুরেন্ট, নামীদামি ফ্যাশন হাউস সব জায়গায় এখন কাঠ কিংবা প্লাস্টিকের পরিবর্তে ব্যাপক ব্যবহার হচ্ছে খোদাই করা সব গ্লাস আর গ্লাসপেপার। খোদাই করা গ্লাস ও গ্লাসপেপার ডিজাইনের সৌন্দর্য ও দামে রয়েছে ভিন্নতা। তবে ডিজাইনকৃত গ্লাস ও গ্লাসপেপার ফ্যাশন হাউস, বিশ্ববিদ্যালয়, অফিস ও রেস্টুরেন্টে বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে বলে জানালেন ইন্টেরিয়র ডিজাইনার হেলেন আলম। বাংলাদেশে গ্লাস ওয়ালপেপার নিয়ে যিনি কাজ করছেন দীর্ঘদিন। তাঁর অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, মোগল আমলে বাদশাহদের অন্দরমহলের দরজা কিংবা জানালার উপরিভাগে খোদাই করা কাচ ব্যবহার করে প্রাসাদের দরজা-জানালার নান্দনিকতা ফুটিয়ে তোলা হতো। অফিসের জন্য আজকাল একটু ভিন্ন ধরনের গ্লাসপেপার ব্যবহার করা হয়। যেমন- হালকা রঙের খোদাই করা গ্লাস কিংবা গ্লাসপেপারগুলো অফিসে ব্যবহারের জন্য ভালো। অফিসের কার্পেট কিংবা দেওয়ালের রঙের সঙ্গে মিল রেখে গ্লাসপেপার এবং খোদাই করা গ্লাসগুলো ব্যবহার করা ভালো। বাড়ি, ফ্যাশন হাউস কিংবা রেস্টুরেন্টে গাঢ় রঙের খোদাই করা গ্লাস এবং গ্লাসপেপার ব্যবহার করা হয়। বাড়ির বেডরুমের জন্য বেছে নেওয়া হয় কুসুমি রঙের কিংবা গাঢ় নীল রঙের খোদাই করা সব গ্লাস ও গ্লাসপেপার। এই খোদাই করা গ্লাস এবং গ্লাসপেপারগুলো খুব সহজে সবার মন কাড়ে। মধ্যবিত্ত থেকে শুরু করে উচ্চবিত্ত সবার এ সময়ের পছন্দ গ্লাস আর গ্লাসওয়াল পেপার। নতুন নতুন ফ্ল্যাটে খোদাই করা গ্লাস এবং গ্লাসপেপার আজকাল ব্যবহার করা হচ্ছে বেশি। তবে বিশেষ নকশাযুক্ত খোদাই করা এ গ্লাস এবং গ্লাসপেপারগুলো এখন অভিজাত শ্রেণীকে বেশি আকৃষ্ট করছে। আর তাই তুলনামূলকভাবে এর দামও বেশ চড়া।
কীভাবে খোদাই করা হয়
বালুর মাধ্যমে অর্থাৎ সানব্লস্টিকের মাধ্যমে এই গ্লাস ও গ্লাসপেপারগুলো খোদাই করা হয়। গ্লাসের কারিগরেরা তাঁদের নিপুণ হাতে বিশেষভাবে তৈরি একটি খোদাই মেশিনের সাহায্যে খোদাইয়ের কাজ করে থাকেন।
ডিজাইনার
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা গ্লাস ও গ্লাসপেপার ডিজাইনের কাজগুলো করে থাকে। ডিজাইনে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই পেন্টিং ব্যবহার করা হয়।
ব্যবহার
দরজা, জানালা, সিঁড়ি, কেলফুনিত এবং রুফের নান্দনিকতাই এই গ্লাস ও গ্লাসপেপারগুলো ব্যবহার করা হয়।

দরদাম
খোদাই করা গ্লাস এবং গ্লাসপেপারগুলো সাধারণত বর্গফুট হিসেবে বিক্রি হয়। প্রতি বর্গফুট খোদাই করা গ্লাসের দাম এক হাজার ৩০০ থেকে শুরু করে এক হাজার ৫০০ টাকার মধ্যে। কাঠের ক্ষেত্রে একই ডিজাইনে খরচ পড়বে প্রায় ১০-১৫ শতাংশ বেশি।
যেখানে পাবেন
নকশাযুক্ত নানা রকম গ্লাস ও গ্লাসপেপার পাওয়া যাবে ইন্টেরিয়র সামগ্রী বিক্রির দোকানে। ঢাকার মহাখালীর ইন্টেরিয়র সামগ্রী বিক্রির দোকানে গ্লাস ও গ্লাসপেপার বেশি বিক্রি হয়। তবে এর মধ্যে মহাখালীর গ্লাস কম্পোজিশন অ্যান্ড আর্ট গ্যালারিতে ভালো মানের গ্লাস ও গ্লাসপেপার পাওয়া যায়।
শামস আহমেদ
প্রকাশকাল: বন্ধন ৪০ তম সংখ্যা, আগস্ট ২০১৩